হিজাবের ব্যাপারে মানুষ যে ভুলটা করে
স্কার্ফ পরা মেয়েকে সিগারেট খেতে দেখেছি। স্কার্ফ পরা মেয়ে অমুসলিম ছেলের কোলে বসে আছে, এমন দৃশ্যও হজম করা লেগেছে। এসব দেখলে হিজাবের প্রতি বিতৃষ্ণা কাজ করা অস্বাভাবিক না। তাই ‘স্কার্ফ পরা’ ক্লাসমেইট যখন প্রশ্ন করেছিল, ‘আনিকা, তুমি স্কার্ফ পরবা না?’ প্রায় আঁৎকে উঠে বলেছিলাম– জীবনেও না!
হিজাবের ব্যাপারে মানুষ সচরাচর যে ভুলটা করে সেটা হলো, অন্যেরা ভুলভাবে হিজাব করছে দেখে পুরো হিজাব করাটাই বাদ দিয়ে দেয়। এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। কামিজ পরেও মানুষ দশরকম বাজে কাজ করে, তাই বলে কেউ কামিজ খুলে উলঙ্গ হয়ে যায় না। কিন্তু হিজাবের ক্ষেত্রে আমরা এমনই একটা হাস্যকর রকমের অযৌক্তিক অজুহাত দাঁড় করাই। ফলাফল– নিজেরাও হিজাব না করা।
হ্যাঁ, একটা বিষয় হতে পারে। আমরা ধরেই নিই– যে হিজাব করছে সে ধার্মিক দিক থেকে সচেতন। হিজাব পালনকারীকে মানুষ সম্মান করে, বখাটে ছেলেরাও তার জন্য রাস্তা ছেড়ে দেয়। তার কাছে আমরা এ ধরণের খারাপ কাজ আশা করি না। তাই হিজাব করে কেউ খারাপ কিছু করলে সেটা বেশি দৃষ্টিকটু হয়ে দাঁড়ায়। এতটাই দৃষ্টিকটু যে আমরা নিজেরা হিজাব না করার মত একটা মারাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই। কিন্তু অন্যের ভুলের জন্য আমরা একটা ভালো কাজ বাদ দেব কেন?
হিজাব পরে কে কী করল সেটা তার হাতেই ছেড়ে দিন। কিয়ামতের কঠিন দিনে আমাদের অন্য কারো ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে না, আপনাকে কেবল আপনার কাজের ব্যাপারেই জবাব চাওয়া হবে। সেইদিন আপনার সাথে আপনার রবের দিন। সেইদিন কেউ অন্যের দোহাই দিয়ে ছাড় পাবে না। মানুষ নামাজ পড়ে না দেখে আপনি নামাজ পড়েন নি, মানুষ ভুল হিজাব করেছে বলে আপনি হিজাব করেন নি, এসব উত্তরে কি আদৌ আল্লাহ খুশি হবেন? আমরা কি আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে ভয় পাই না?
এই যুগ হলো অজ্ঞতা আর নির্লজ্জতার যুগ। হিজাব পরেও মানুষ নষ্টামি করে কারণ তারা জানেনা এই হিজাবের অর্থ কী। আপনি যদি ভালোভাবে হিজাব করেন, তাহলে আপনার থেকেই হয়ত তারা হিজাবের সঠিক অর্থটা শিখবে। আল্লাহর কাছে অন্তত বলতে পারবেন, যে যুগে মানুষ একটানে বিবস্ত্র হয়ে যেত, সেই যুগে আপনি হিজাবের অর্থটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। মহান রব সব দেখেন, আপনার চেষ্টাও তিনি দেখবেন, কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ।