নব্বই মিনিটে স্বপ্ন পুড়ে ছাই
currentnews
কেউ হারিয়েছেন উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন নিজের দোকান, কারো ঘরের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, আগুন কেড়ে নিয়েছে অনেকের গচ্ছিত টাকা। মহাখালীর সাততলা বস্তির আগুনে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ২০০ পরিবার। সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে লাগা এই আগুন মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে। নব্বই মিনিটে তাদের সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
স্ত্রী সন্তান নিয়ে ৩ জনের সংসার রংমিস্ত্রি লিটন মিয়ার। আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নিয়েছে তিলে তিলে সাজানো সংসারের সব জিনিসপত্র।
মহাখালীর সাততলা বস্তির আরো এক বাসিন্দা বলেন, পুড়ে যাওয়া বস্তিতে কিছু রক্ষা পেয়েছে কি না, তার খোঁজ করছি। সবকিছু সরিয়ে দেখছি। পোড়া জিনিসপত্রে নিজের স্বপ্নটা বারবার খুঁজি দেখছি, দেখি কিছু খুঁজে পাওয়া যায় নাকি।
আরো একজন বাসিন্দা জানান, আমার একটা দোকান ছিলো, সেখানে মালামাল বেশিরভাগই পুড়েই ছাই হয়ে গেচে। বস্তিতে আমার আত্মীয়স্বজন রয়েছে তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি।
ইলেকট্রনিক্সের দোকানের আয় দিয়েই চলতো মো রাসেলের সংসার। দোকানের উপার্জনেই চালাতেন সন্তানের পড়াশোনার খরচ। পরিবার নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবেন সেটাই এখন জানেন না।
মুদি দোকানি আবুল কালাম বলেন, তিনি দোকান চালানোর পাশাপাশি চাল ভাঙাতেন। দোকানে ৫০টিরও বেশি চালের বস্তা ছিল। সব পুড়ে গেছে। তার সাত থেকে আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সাততলা বস্তির বাসিন্দা তসলিমা আক্তার মহাখালীতে একটি বাসায় কাজ করেন। তিনি তিন বছর ধরে এ বস্তিতে থাকেন। তার স্বামী রিকশাচালক। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন। একটি ঘরের জন্য ২ হাজার ৭০০ টাকা ভাড়া দিতেন। তসলিমা জানান, বস্তির আগুনে ঘর পুড়ে যাওয়ার পর এখন কোথায় যাবেন বুঝতে পারছেন না।
মহাখালি সাততলা বস্তিতে লাগা আগুনে সব হারিয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন এক নারী। তার বসতঘর এবং দোকানপাট হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তিনি।
এক বাসিন্দা বলেন, আমার সবকিছু পুইরা গেছে, সবচেয়ে বড় দোকানটা আমার ছিলো।
গচ্ছিত দুই লাখ টাকা পুড়ে যাওয়ায় দিশেহারা আরেক দোকানদার দুলাল দাস।
স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি জমিতে বাস করা মানুষদের সিংহভাগই নিম্ন আয়ের। আগুনে অন্তত ১৬৫ টি ঘর ও ২৬ টি দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি বস্তিবাসীর।
ক্ষতিপূরন ও পুনর্বাসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে সহায় সম্বল হারানো মানুষগুলো।
দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর(অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান নিশ্চিত করেছেন। বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বস্তিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ১২টা ৫০মিনিটে আমাদের প্রথম ইউনিট সেখানে যায়। পরে আরো ১০টি ইউনিট যোগ দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর আমরা পাইনি। কীভাবে আগুন লেগেছে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। তদন্ত করে এ বিষয়ে পরে জানানো হবে।
এই কর্মকর্তা আরো বলেন, সেখানে অর্ধ শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি । তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া বেশকিছু দোকানপাটও পুড়ে গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
স্থানীয়রা জানান, আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। ধোঁয়ায় আশপাশের এলাকাও আচ্ছন্ন হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সাথে তারাও আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেন।
আগুনের তীব্রতা বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ ঘরই পুড়ে যায়। অপ্রশস্ত রাস্তা, পানির উৎসের অপ্রতুলতা আর উৎসুক জনতার ভিড়ে কাজে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। রাত একটার কিছু আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাথমিক ভাবে আগুন লাগার কারণ জানা না গেলেও বৈদুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সূত্রপাত হতে পারে ধারনা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের। কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। গত এক দশকে আরো অন্তত তিনবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে মহাখালীর এই সাততলা বস্তিতে।